বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

রঙ্গিলা বাড়ই রে, তুমি নানান রঙের খেলা খেলো

রঙ্গিলা বাড়ই রে, তুমি নানান রঙের খেলা খেলো
আমি তোমার প্রেমের পাগল তোমায় বাসি ভালো।।

বাড়ই রে, তোমার কর্ম তুমি করো মিছা দোষী আমি
পুরাইতে তোমার বাসনা দেশ-বিদেশে ভ্রমি
আমার ঘরে থাক তুুমি তোমার ভাবে চলো।।

বাড়ই রে, করাও কী করি আমি ভাবি দিবানিশি
লোকে বলে কাগায় ধান খায় বেঙের গলায় ফাঁসি,
তোমার লাগি কুলবিনাশি বিফলে দিন গেলো।।

বাড়ই রে, যাক না জাতি হোক না ক্ষতি দুঃখ নাই রে আর
সত্য করে কও রে বাড়ই তুমি নি আমার
তোমার প্রেমে আব্দুল করিম মরে যদি ভালো।।



কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা:৩৩৮

আমি তোমার কলের গাড়ি তুমি হও ড্রাইভার

আমি তোমার কলের গাড়ি তুমি হও ড্রাইভার
তোমার ইচ্ছায় চলে গাড়ি দোষ কেন পড়ে আমার।।

চলে গাড়ি হাওয়া ভরে, আজব কল গাড়ির ভিতর
নিচ দিকেতে চাকা ঘোরে সামনে বাতি জ্বলে তার।।

রত্নমানিক বোঝাই করা, প্রহরী সব দয়ে পাহারা
বাদি ছয়জন আছ তারা সুযোগে করে সংহার।।

কলের গাড়ি কুদরতে চলে, চলে না পেট্রোল ফুরাইলে
বাউল আব্দূল করিম বলে কুদরতের শান বোঝা ভার।।




কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা: ৩৪১

নাও বানাইল নাও বানাইল রে কোন মেস্তরি

নাও বানাইল নাও বানাইল রে কোন মেস্তরি
কোন সন্ধানে বানাইল নাও বুঝিতে না পারি
নাও বানাইল রে কোন মেস্তরি।।

সুজন মেস্তরি পাইয়া, ঐ নাও দিয়াছে গঠন করিয়া
বত্রিশ বান্ধের নৌকাখানা পাইক সারিসারি।।

চাইর রঙে রঙ লাগাইয়া, ঐ নাও দিয়াছে সুন্দর করিয়া
যে জন হয় সুজন নাইয়া রাখে যত্ন করে।।

আব্দুল করিম কয় ভাবিয়া, ঐ নাও যাবে যখন পুরান হইয়া
ঘাটের নৌকা ঘাটে থইয়া যাইবে বেপারী।।



কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা:৩৭৩

আগের বাহাদুরী এখন গেলো কই

আগের বাহাদুরী এখন গেলো কই
চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই

মাথায় চুল পাকিতেছে, মুখে দাঁত নড়ে গেছে
চোখের জ্যোতি কমেছে মনে, ভাবি চশমা লই।
মন চলেনা রঙতামাশায়, আলস্য এসেছে দেহায়
কথা বলতে ভুল পড়ে যায়, মধ্যে মধ্যে আটক হই।।

কমিতেছি তিলেতিলে, ছেলেরা মুরব্বী বলে
ভবের জনম গেল বিফলে, এখন সেই ভাবনায় রই।
আগের মতো খাওয়া যায়না, বেশি খাইলে হজম হয়না
আগের মতো কথা কয়না, নাচে না রঙ্গের বাড়ই।।

ছেলেবেলা ভালো ছিলাম, বড় হয়ে দায় ঠেকিলাম
সময়ের মুল্য না দিলাম, তাইতো জবাবদিহি হই।
যা হবার তা হয়ে গেছে, আব্দুল করিম ভাবিতেছে
এমন একদিন সামনে আছে একেবারে দরবেশ হই


কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা:৩৪২

মহাজনে বানাইয়াছে ময়ূরপঙ্খি নাও

মহাজনে বানাইয়াছে ময়ূরপঙ্খি নাও 
সুজন কান্ডারি নৌকা সাবধানে চালাও।।

বাইচ্ছা বাইচ্ছা পাইক তুলিয়া নাওখানা সাজাও
ঝোঁক বুঝিয়া ছাড়ো নৌকা সুযোগ যদি পাও।।

অনুরাগের বৈঠা বাইয়া প্রেমের সারি গাও
রঙ্গিলা বন্ধুর দেশে যাইতে যদি চাও।।

বাউল আবদুল করিম বলে বুঝিয়া নায়ের ভাও 
লক্ষ্য ঠিক রাখিয়া বাইও যাইতে সোনার গাঁও।।


কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা৩৭৫

ও রঙিলা নাইয়া রে রঙে বৈঠা বাইয়া রে

ও রঙিলা নাইয়া রে রঙে  বৈঠা  বাইয়া রে
কোন দেশে যাও রে মাঝি
আমারে যাও কইয়া রে।।

ভাটিয়াল পানি বাইয়া মাঝি
ভাটিয়াল গান গাইয়া রে
ভাটিয়াল হাওয়ায় ভাটিয়াল বাদাম দিয়াছ টানিয়া রে
লিলুয়া বাতাসে তোর নাও চলছে ধাইয়া ধাইয়া রে
ময়ূরপঙ্খি নাওখানা তোর
মধ্যে দিলা ছৈয়া রে।।

চন্দ্রসম রূপ রে মাঝি তোমারই বদনে রে
রূপের ছটা বিষম লেঠা লাগিল নয়নে রে
একটু টিকে যাওরে মাঝি নৌকাখান ভিড়াইয়া রে
তোর দেশে প্রাণ যাইতে চায়
তোর নৌকায় উঠিয়া রে।।

কিসের ভাই কিসের বন্ধু কিসের দয়ামায়া রে
এই দুনিয়া পুতুল খেলা দেখিনু ভাবিয়া রে
মন মানুষকে ধরব বলে মনে আশা নিয়া রে
করিম কয় আশার আশে
দিন গেল ফুরাইয়া রে।।



কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা:৩৮৬

ভাবিলে কী হবে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে

ভাবিলে কী হবে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে।
জাতি কুল যৌবন দিয়াছি, প্রাণ যাবে তার কাছে গো
যা হইবার তা হইয়া গেছে । ।

কালার সনে প্রেম করিয়া কালনাগে দংশিছে
ঝাড়িয়া বিষ নামাইতে পারে এমন কি কেউ আছে গো।।

পিরিত পিরিত সবাই বলে, পিরিত যে কইরাছে
পিরিত করিয়া জ্বইলা-পুইড়া কতজন মরছে গো।।

আগুনের তুলনা হয়না, প্রেম আগুনের কাছে
নিভাইলে নিভে না আগুন কি কইরা প্রাণ বাঁচে গো

বলে বলুক লোকে মন্দ, কুলের ভয় কি আছে
আব্দুল করিম জিতে মরা বন্ধু পাইলে বাঁচে গো।।




কালনীর ঢেউ, শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্রপৃষ্টা:৩৮৭